জাপানিদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ুর পেছনের প্রধান কারণ হচ্ছে তাদের নিত্যদিনের খাবার তালিকা। তাদের খাবারের তালিকা থাকে সামুদ্রিক খাবার, সয়াবিন, ফার্মেন্টেড খাবার, চা ও মাছ। এদের খাবার স্বাস্থ্যকর এবং বৈচিত্র্যময় বলেই বিশ্বের অন্যতম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো জাপানিদের খাবার তালিকা কেমন হয়ে থাকে।
জাপানিদের খাবার কেবল সুস্বাদুই নয় পুষ্টিগণ সমৃদ্ধ হয়ে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে বেশ কিছু জায়গায় জাপানিদের খাবার অনুসরণ করে গড়ে উঠেছে ফুড কার্ড। যা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছে তাদের খাবারের মানের উপর ভিত্তি করে। শুধু ফুড কার্ড নয় বড় বড় রেস্তোরাগুলাতে ও দেখা যায় জাপানি খাবারের মেলা।
খুবই কম উপকরণ দিয়ে এবং পরিবেশনের মাধ্যমে তারা তাদের খাবারগুলোকে আকর্ষণীয় করে তোলে।
তাদের খাবারে বৈচিত্রের মধ্যে সবথেকে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে সুশী এবং বিভিন্ন রকমের স্যুপ ও স্যুপি নুডুলস। চলুন তাহলে আজ জেনে নেই জাপানিদের খাদ্য তালিকায় কি কি থাকছে।
জাপানিদের খাবার তালিকা
১। সুশি- সুশী হচ্ছে জাপানি খাবারের শিল্প ও সংস্কৃতি এটি কর্তব্য জনপ্রিয় এবং ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার। সুশী মূলত তৈরি করা হয় ভিনেগার মেশানো ভাতের উপর মাছ এবং সামুদ্রিক উপাদান মিশ্রণের মাধ্যমে এর ভেতরে দেয়া মাছ-মাংসের উপাদান অনেকে কাঁচা অথবা রান্না করে খেয়ে থাকে।
প্রাচীন চিনে সুশীর উৎপত্তি হয়েছিল মাছ সংরক্ষণ পদ্ধতি হিসেবে। কিন্তু পরবর্তীতে এটি একটি আলাদা খাবারের রূপান্তরিত হয় জাপানে। অষ্টম শতাব্দীতে ভাতের সাথে মাছ সংরক্ষণ করা হতো, আর সে সময় এর নাম দেওয়া হয়েছিল ‘নারেজুশি’। ১৮৮৭ দিয়ে টোকিওতে উদ্ভব হয় আধুনিক সুশী। এবং পরবর্তীতে এর বৈচিত্র দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
২। রামেন- জাপানের খাবার তালিকা ঘুরে দেখলে চোখ পড়বে রামেনের উপর। এটা জাপানের অন্যতম একটি প্রিয় খাবার। যা নুডলস, স্যুপ, মাংস এবং বিভিন্ন টপিংসের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়। সবচেয়ে সাধারণ ডিস রামেন, এটি দেশের সর্বত্র আদিবাসীদের দ্বারা তৈরি হয়ে থাকে। রামেন তৈরিতে যে সকল মিশ্রণ ব্যবহার করা হয় তা খুবই সহজ। রামেন রান্না করতে প্রয়োজন হয় মাছ, মাংস, ডিম, বিভিন্ন রকম শস্য এবং নুডলস। রান্নার পাশাপাশি পরিবেশনের মাধ্যমে আরো বেশি লোভনীয় হয়ে থাকে। এর স্বাদ অতুলনীয়।
১৯শ ও ২০শ শতকে এটি জাপানে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করে। মূলত রামেনের শিকড়ের উদভূত হয়েছিল চীনের নুডলস থেকে। রামেন জাপানের একটি সাধারণ মানুষের খাবার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়, কেননা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটি সহজলভ্য উপকরণ ও দ্রুত প্রস্তুত করার মত একটি অন্যতম খাবার।
৩। টেম্পুরা- টেম্পুরা জাপানে আসে পর্তুগিজ মিশনারিদের মাধ্যমে ১৬শ শতকে। এটি অত্যাধিক নিখুঁত ও স্বাস্থ্যকর একটি খাবার জাপানিদের মতে খাদ্য একজন ব্যক্তির মত, তাই এটি শালীন সমাজে নগ্ন অবস্থায় উপস্থিত হতে পারে না।
টেম্পুরা মূলত মাছ, চিংড়ি বা সবজি হালকা ব্যাটারে ডুবিয়ে ডুবো তেলে ভাজা হয়। টেম্পুরা নিজস্ব বৈশিষ্ট্য গড়ে তোলে তার স্থানীয় রন্ধন শৈলেন সঙ্গে খাপ খেয়ে।
শুধুমাত্র জাপানে নয় টেম্পুরা এখন জাপানের বাইরেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এটি বিভিন্ন ধরনের মাছ এভোকাডো বা কাঁকরার মাংস দিয়েও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। জাপানিদের খাবার তালিকা থেকে টেম্পুরা যেন প্রায় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।
৪। মিসো স্যুপ- জাপানের অন্যতম জনপ্রিয় এবং স্বাস্থ্যকর একটি খাবার হচ্ছে মিসো স্যুপ। প্রোটিন ও প্রবায়োটিক সমৃদ্ধ এই স্যুপ অত্যন্ত সহজপাত্র এবং হালকা খাবার। এটি প্রায় প্রতিদিনের খাবার তালিকায় জাপানিদের একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। যার মূল উপাদান হচ্ছে মিসো পেস্ট, যা ফার্মেন্টেড সয়া দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
৭ম-৮ম শতাব্দীতে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা যখন মিসোপেস্ট ব্যবহার শুরু করে তখন থেকে এর উৎপত্তি শুরু হয়। এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার হওয়ার কারণে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। এটি তৈরি করা অত্যন্ত সহজ এবং শক্তি বৃদ্ধি করায় এটি সামুরাই সৈন্যদের জন্য প্রধান খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
জাপানিরা কেবলমাত্র ভিন্ন রকমের খাবার প্রস্তুত নয়, খাবারের পরিবেশন, ঋতুভিত্তিক উপাদান এবং দৃষ্টি নন্দন সাজানো কে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
খাবার গুলো ফার্মেন্টেড উপাদান দিয়ে তৈরি হওয়ায় এটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদু খাবার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে তাছাড়া তারা তাদের ফিটনেস এর প্রতি খুবই যত্নশীল তাই জাপানিদের খাবার তালিকা খুবই যত সহকারে করা হয়েছে।