মানুষের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে একটি হচ্ছে পা। আজকের এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হবে পায়ের যত্ন নেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। অর্থাৎ কিভাবে আপনারা নিজের পায়ের যত্ন দিবেন ঘরোয়া উপায়ে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।
মানুষের চলাফেরা করার জন্য প্রয়োজন হয় পা। আর এটি যদি একজন মানুষের না থাকে কিংবা দুর্ঘটনায় হারিয়ে ফেলেন। ওই ব্যক্তির কতটা কষ্ট হয় শুধু সেই মাত্র জানতে পারেন। কেননা তখন তাকে বিবর হতে হয় অন্য মানুষের ওপর এবং অন্য কোন মাধ্যমে। যার কারণে তিনি স্বাভাবিক জীবনে চলাচল করতে ব্যাহত ঘটে। বিশেষ করে দ্রুতগতিতে চলাফেরা কিংবা নিজের প্রয়োজনীয় কাজগুলো সারতে পারেন না।
তাই আমাদের উচিত প্রত্যেকের এর যত্ন নেওয়া। যাতে করে যেকোনো পরিস্থিতিতে আমরা তার সুরক্ষা করতে পারি। যদি পার সুরক্ষিত থাকে তাহলে জীবন যাত্রার মান অনেক সহজ হয়ে যায়। কোন ধরনের সমস্যা হয় না এবং চলাফেরা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ হয়। চলুন এখন আমরা নিচে থেকে দেখি নাই কিভাবে এই পায়ের যত্ন করবেন।
পায়ের যত্ন নেওয়ার নিয়ম
পায়ের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা
পায়ের যত্নের প্রথম এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো পা পরিষ্কার রাখা। প্রতিদিন নিয়মিত পা ধোয়া পায়ের সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক। দিনের বিভিন্ন সময় আমরা এমন অনেক জায়গায় যাই, যেখানে ধুলাবালি এবং জীবাণু জমা হতে পারে। এজন্য প্রতিদিন পা ধোয়া অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে বাইরে থেকে ফিরে আসার পর বা দীর্ঘ সময় জুতা পরে থাকার পর পা ধোয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ধোয়ার নিয়ম: হালকা গরম পানিতে সাবান দিয়ে ভালোভাবে পা ধুতে হবে। পায়ের আঙুলের ফাঁকেও পরিষ্কার করতে হবে, কারণ সেখানে ময়লা এবং জীবাণু জমে থাকতে পারে। পা ধোয়ার পরে পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে পা শুকিয়ে নেওয়া উচিত, যাতে পায়ের ত্বকে আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি কমে।
পায়ের ত্বক ও গোড়ালির যত্ন
পায়ের ত্বক ও গোড়ালি অনেক সময় শুষ্ক হয়ে যায়, বিশেষ করে শীতকালে। শুষ্ক ত্বকের ফলে পায়ের গোড়ালি ফেটে যেতে পারে, যা ব্যথার কারণ হতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে ইনফেকশনও হতে পারে। তাই পায়ের ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার: প্রতিদিন পা ধোয়ার পরে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত, বিশেষ করে শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে। হাইড্রেটিং লোশন বা ক্রিম পায়ের ত্বকে প্রয়োগ করলে তা ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। পেট্রোলিয়াম জেলিও গোড়ালির ফাটা ত্বক সারাতে ভালো কাজ করে।
এক্সফোলিয়েশন: সপ্তাহে ২-৩ বার পায়ের মৃত কোষ দূর করার জন্য পায়ের ত্বক এক্সফোলিয়েট করা উচিত। পিউমিস স্টোন বা পা স্ক্রাবার ব্যবহার করে পায়ের ত্বক ঘষে মৃত কোষ দূর করা যায়। এতে পায়ের ত্বক মসৃণ থাকবে এবং নতুন ত্বক উন্মোচিত হবে।
সঠিক জুতা নির্বাচন
সঠিক জুতা নির্বাচন পায়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অস্বস্তিকর বা সঠিক সাইজের নয় এমন জুতা পরলে পায়ের ব্যথা, ফোস্কা এবং নখের সমস্যা হতে পারে। অনেক সময় আমরা ফ্যাশনের কারণে এমন জুতা পরি যা আমাদের পায়ের জন্য আরামদায়ক নয়। এটি দীর্ঘমেয়াদে পায়ের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
সঠিক সাইজের জুতা: জুতা এমন হতে হবে যা পায়ের সঠিক মাপের হয় এবং পায়ের আঙুলের ফাঁক যথেষ্ট জায়গা থাকে। টাইট জুতা পায়ের আঙুলের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা ব্যথার কারণ হতে পারে। আবার অতিরিক্ত ঢিলা জুতাও পায়ে ফোসকা তৈরি করতে পারে।
আরামদায়ক জুতা: হাঁটার জন্য আরামদায়ক এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের উপযোগী জুতা পরা উচিত। যদি পা ঘামে, তবে এ থেকে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে। তাই এমন জুতা পরা উচিত, যাতে পায়ে বাতাস চলাচল করতে পারে এবং পা শুষ্ক থাকে। বিশেষ করে যাঁরা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করেন, তাঁদের জন্য আরামদায়ক এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের উপযোগী জুতা বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
পায়ের নখের যত্ন
নখের যত্ন নেওয়া পায়ের যত্নের অন্যতম একটি অংশ। পায়ের নখ বড় হলে ময়লা জমতে পারে এবং ইনফেকশন হতে পারে। আবার অনেক সময় নখের ভিতরে ব্যাকটেরিয়া জমা হয়ে ইনফেকশন হতে পারে, যা থেকে নখের রোগ বা ব্যথা হতে পারে। পায়ের নখ নিয়মিত কাটতে হবে এবং পরিষ্কার রাখতে হবে।
নখ কাটা: পায়ের নখ কাটার সময় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে নখ খুব বেশি ছোট না হয়, কারণ এটি পায়ের নখের ভেতর ইনগ্রোন নখ হতে পারে। এই সমস্যাটি খুবই কষ্টদায়ক এবং চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। পায়ের নখ সোজাভাবে কেটে নেওয়া উচিত, যাতে নখের কোনো প্রান্ত ত্বকের ভেতরে না ঢুকে।
পেডিকিউর
পেডিকিউর হলো পায়ের বিশেষ যত্ন, যা পায়ের ত্বক, নখ এবং গোড়ালির স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। পেডিকিউর পায়ে জমে থাকা মৃত কোষ, ময়লা এবং অবাঞ্ছিত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। মাসে অন্তত একবার পেডিকিউর করলে পায়ের ত্বক ও নখ সুস্থ থাকবে।
ঘরে পেডিকিউর: ঘরে পেডিকিউর করার জন্য প্রথমে পা ১০-১৫ মিনিট হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর পায়ের ত্বক স্ক্রাবার দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করতে হবে এবং নখ কাটতে হবে। এরপর ময়েশ্চারাইজার দিয়ে পায়ের ত্বক মসৃণ করে নিতে হবে।
পায়ের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি
দীর্ঘ সময় বসে থাকা বা দাঁড়িয়ে থাকলে পায়ের রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হতে পারে। পায়ের রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখতে হলে মাঝে মাঝে পা নাড়াতে হবে। অফিস বা বাড়িতে দীর্ঘ সময় বসে থাকলে প্রতি ঘণ্টায় কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতে হবে, যাতে পায়ে রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে।
পায়ের ব্যায়াম: নিয়মিত পায়ের ব্যায়াম করলে পায়ের পেশী শক্তিশালী হয় এবং রক্ত সঞ্চালন ভালো থাকে। যেমন, পায়ের আঙুলগুলো কিছুক্ষণ পর্যন্ত নাড়ানো, পায়ের গোড়ালি উঠানো বা বসা অবস্থায় পা সোজা করে রাখা। এই ধরনের ব্যায়াম পায়ের পেশীগুলোকে সুস্থ রাখে এবং ব্যথা কমায়।
এই প্রতিবেদনে আপনারা দেখলেন পায়ের যত্ন নেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। এরকম দৈনন্দ জীবনের চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে টিপসের জানতে হলে আমাদের সাথে থাকবেন। কারণ এই ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় আমাদের ওয়েবসাইটে।