২০২৪ সালের ৮ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে গেছে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা। সর্বপ্রথম উঠে এসেছে চিকিৎসালয়ে নোবেল বিজয়ী দুই বিজ্ঞানীর নাম। এটি স্টকহোমে চিকিৎসা বিজ্ঞানে সুইডেনের রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান সুইডিশ রয়্যাল অ্যাকাডেমির আওতাধীন নোবেল কমিটি ঘোষণা করেছেন। বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার নোবেল দেওয়া হচ্ছে ১৯০১ সাল থেকে। ২০২৪ সালে যারা নোবেল বিজয়ী হলেন সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের নাম অনুসারে এ পুরস্কারটির নামকরণ করা হয়েছে। এই বিজ্ঞানী বিপুল অর্থের মালিক হয়েছিলেন শক্তিশালী ডিনামাইট আবিষ্কার করে। তাছাড়া প্রতি বছর পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, শান্তি ও সাহিত্য— এই ৫টি খাতে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিদের পুরস্কার প্রদান করা হয়, সে ব্যাপারে তিনি উইল করে রেখে যান। সাথে এটাও জানান সেই পুরস্কারের নামকরণ যেন তার নামেই করা হয়। পরবর্তীতে এই পাঁচ বিভাগের সাথে ১৯৬৯ সালে অর্থনীতি যুক্ত হয়। এখন তাহলে জেনে নেয়া যাক ২০২৪ সালের নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সম্পর্কে
১। চিকিৎসাবিদ্যা
ভিক্টর অ্যামব্রোস এবং গ্যারি রুভকুন এই দুইজন বিজ্ঞানী নোবেল লাভ করেন। তারা এই পুরস্কার অর্জন করেছেন মাইক্রোআরএনএ সংক্রান্ত গবেষণার জন্য। এটি মূলত জিন নিয়ন্ত্রণের জন্য উন্মোচন করা হয়েছে। এটি ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং বিপাক সংক্রান্ত গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
মাইক্রোআরএনএ বিভিন্ন জিনের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে, যার গবেষণা মূলত চালানো হয়েছিল কেঁচো প্রজাতি Caenorhabditis elegans এর ওপর। যার ফলে পরবর্তীতে তারা প্রমাণ করতে পারেন যে, মানব দেহ এবং অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে একই ধরনের মাইক্রো আরএনএ থাকে। নোবেল বিজয়ী চিকিৎসা বিজ্ঞানে আরো জানান বর্তমানে মানবদেহে প্রায় ৮০০টির বেশি মাইক্রোআরএনএ রয়েছে, যা কিনা জিন নিয়ন্ত্রণের কাজে বিশেষ ভূমিকা করে।
২০২৪ সালে যারা নোবেল বিজয়ী হলেন
এই আবিষ্কারের মাধ্যমে ক্যান্সার, সংক্রমণ, এবং স্নায়বিক রোগের ক্ষেত্রে মাইক্রোআরএনএ প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে গবেষণা চলছে। যার ফলে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা নতুন পথ উন্মুক্ত হচ্ছে। যদিও এখনও এ সকল রোগের কোন ঔষধ বাজারে এসে পৌঁছায়নি, তবে ভবিষ্যতে এটি অত্যন্ত মূল্যবান হিসেবে বিবেচিত হবে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের জন্য।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে ২০২৪ সালের দুইজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক
- ভিক্টর অ্যামব্রোস (Victor Ambros): ১৯৫৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন মার্কিন জীব বিজ্ঞানী ভিক্টর অ্যামব্রোস। প্রথমবারের মতো তিনি তার গবেষণার দ্বারা মাইক্রোআরএনএ আবিষ্কার করেন। যার কাজ হচ্ছে ছোট আকারে অনু ও কোষের বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণ করা।
অ্যামব্রোস গবেষণার দ্বারা এটিও প্রমাণ করে যে কিভাবে একটি সত্য মাইক্রো আর এন এ থেকে বড় প্রোটিন তৈরি করতে না পারলেও জিনা কার্যক্রম গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি ক্যান্সার, ডায়াবেটিসহ নানা রোগের চিকিৎসা গবেষণার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- গ্যারি রুভকুন (Gary Ruvkun):১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণ করেন মার্কিন জীব বিজ্ঞানী গ্যারি রুভকুন। তিনি গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলে। জিন নিয়ন্ত্রণ করাই ছিল তার গবেষণার মূল বিষয়। তাছাড়া Ruvkun ১৯৯৪ সালে lin-14 নামক আরেকটি মাইক্রোআরএনএ আবিষ্কার করেন, যা কোষের বিকাশের সাথে জড়িত। সেই সাথে তিনি এটিও প্রমাণ করেন যে, কিভাবে জিনগুলো একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
ভিক্টর অ্যামব্রোস ও গ্যারি রুভকুন দুজন চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও নোবেল বিজয়ী একত্রিত হয়ে এটাই প্রমাণ করেছেন যে, মাইক্রোআরএনএ বিভিন্ন জিনের নিয়ন্ত্রণ করে এবং সেই সাথে এই প্রক্রিয়াটি মানবদেহের জিনেও বিদ্যমান রয়েছে।
২। পদার্থবিজ্ঞানী
২০২৪ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন দুজন বিজ্ঞানী- জন জে. হপফিল্ড ও জেফরি ই. হিনটন। রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস পুরস্কারের জন্য মঙ্গলবার (০৮ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে তাদের নাম ঘোষণা করা হয়।
এই দুই বিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন তাদের গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ও গবেষণার কারণে। তাদের গবেষণার বিষয় ছিল কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক। এর কাজ হচ্ছে মানুষের মস্তিষ্ক থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে এক ধরনের কম্পিউটার সিস্টেম তৈরি করা।
অ্যাসোসিয়েটিভ মেমোরি তৈরি করেছেন জন জে. হপফিল্ড। এর কাজ হচ্ছে ডেটাতে ছবি এবং অন্যান্য ধরনের প্যাটার্ন সংরক্ষণ এবং পুনর্গঠন করতে পারে।
অন্যদিকে জেফরি ই. হিনটন এমন এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেন, যা কিনা স্বতন্ত্রভাবে ডেটায় বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য খুঁজে পেতে পারে। তারা আশির দশক থেকে কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক নিয়ে এ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন।
- জন জে. হপফিল্ড: ১৯৩৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে জন্মগ্রহণ করেন জন জে. হপফিল্ড। তাছাড়া ১৯৫৮ সালে তিনি তার পিএইচডি সম্পন্ন করেন নিউইয়র্কের করনেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এমনকি হপফিল্ড নিউ জার্সির প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন।
- জেফরি ই. হিনটন: ১৯৪৭ সালে লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন জেফরি ই. হিনটন। তিনি ১৯৭৮ সালের পিএইচডি অর্জন করেন যুক্তরাজ্যের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তাছাড়া জেফরি অধ্যাপক ছিলেন কানাডার টোরেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের।
৩। রসায়নে নোবেল বিজয়ী
২০২৪ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে সম্মানিত করা হয়েছে লুইস ব্রুস, মৌঙ্গি বাওয়েন্দি এবং আলেক্সেই ইয়েকিমভকে। তাদের এই পুরস্কারটি প্রদান করা হয় “কোয়ান্টাম ডটের আবিষ্কার ও সংশ্লেষণ” বিষয়ে অবদানের জন্য। যার কাজ হল আলো এবং বিদ্যুৎ প্রয়োগে অনন্য বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করা।
২০২৪ সালের নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের সকল তথ্য এখনো পাওয়া সম্ভব হয়নি। পরবর্তী আপডেটের আমরা সকল তথ্যগুলো উপস্থাপন করব। ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকবেন